abmshafiullah.com

থ্রি সিক্রেট অব লাইফ

নববর্ষের জশনে-জুলুস। বাদশাহ ছালামত এই দিনে ব্যতিক্রম কিছু করে মহান হওযার চেষ্টা করেন। রাজা উজির সাহেবকে বললেন আজকের এই আনন্দের দিনে ‘ যা চাইবেন তাই পাবেন’।  পরে আবার কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় এই সন্দেহে উজির প্রথমে কিছু বলেন নাই। রাজা দ্বিতীয় বার এলান করলেন ‘আজকে যা চাইবেন, তাই পাইবেন’।

 

উজির এবার  আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। বিনয়ের সাথে বললেন ‘গুসতাকি মাফ করবেন বাদশাহ ছালামত’ আপনি শাহানশাহ । এই সাম্রাজ্যের মালিক আপনি। সামান্য ভুমি যদি আমাকে দান করতেন, তাহলে বাকী জীবনটা আমার পরিবার নিয়ে সুখে কাটাতে পারতাম। তিনি সচিবকে হুকুম দিলেন কাগজ-কলমে চুক্তির শর্তাদি উল্লেখ করতে। তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রাপ্তির সাপেক্ষে রাজা উজিরকে সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দান করবেন, তবে  উত্তর সঠিক না হলে তার শাস্তি শিরচ্ছেদ।

১. জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য কি?

২.  জীবনের সবচেয় বড় ধোকা কি?

৩. জীবনের সবচেয়ে বড় অসহায়ত্ব কি?

 উজির তার অধিনস্থ সবাইকে ডাকলেন কিন্তু তাদের জবাবে তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। তখন গুগুল বাবা ছিলনা। ইন্টারনেটও ছিলনা।খুব কঠিন সময়। উত্তরের খুজে তিনি বের হয়ে পড়লেন। বনের পাশ দিয়ে গমনের সময় তাঁকে পেরেশান দেখে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন আপনি এত পেরেশান কেন?  উজিরের সমস্যা শুনে জনৈক ব্যক্তি বললেন, এই বনের মাঝে ঝুপড়ি ঘরে এক সাধু-বুজর্গ একা একা থাকেন। তাঁর কাছ থেকে আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন।

 কথামত উজির সেখানে গিয়ে হাজির হলেন। গিয়ে দেখলেন  ঝুপড়িঘরে সাধু ধ্যানাবস্থায় আছেন।  ধ্যাণ ভাঙ্গলে সাধু বললেন, ‘ স্বাগতম স্বাগতম’। আপনি সঠিক স্থানেই এসেছেন, উজির সাহেব। উজির অবাক হলেন তার পেশা সাধু জানলো কেমন করে। উজির লক্ষ্য করলেন ,ঝুপরির পাশেই রয়েছে পেয়ালা ভর্তি দুধ ও একটি কুকুর। সাধু বললেন ‘আপনার ৩টি প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে আছে। উজির দ্বীতিয় বার অবাক হলেন। রাত্রি গভির হলে উজির উত্তরগুলো জানতে চাইলেন।

১.  উজির সাহেব, জীবনের  প্রথম বড় সত্য মৃত্যু। জীবনে আরও অনেক সত্য আছে। কিন্তু মৃত্যুই একমাত্র সত্য যা  প্রত্যেকের জীবনে  ঘটে থাকে।    তা থেকে কেউ বাঁচতে পারেনা। এটা আসবেই।

২. জীবনের সবচেয়ে বড় ধোকা স্বয়ং জীবন । মানুষ জন্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসে আর মৃত্যুর মাধ্যমে সে ইহলোক ত্যাগ করে।  জীবন  একটি মায়া, একটি স্বপ্ন, একটি হেলোসিনেশন। একটি অবাস্তব বিষয়।   তাই জীবন সবচেয়ে বড় ধোকা । সাধু এবার একটু থামলেন।

উজির বললেন ,স্যার থামলেন কেন? সাধু বললেন, দুটোর উত্তর দিয়েছি বিণিময় ছাড়া । তৃতীয় উত্তরটির জন্য আপনাকে অনেক মুল্য দিতে হবে। যদি রাজি থাকেন তাহলে ‘বলবো, নইলে না’।

সাধু বললেন, কুকুরের পাশে পড়ে থাকা দুধ ভর্তি পিয়ালা থেকে আমাকে দুধ পান করতে হবে। উজিরের অহং এ বড় লাগলো। আমি উজির মানুষ, এই পিয়ালা থেকে দুধ পান করবো? কি সিদ্ধান্ত নিবেন বুঝতে পারছেন না।

 সাধু বললেন দেখুন, কি করবেন? জীবন হারাবেন নাকি পিয়ালা থেকে দুধ পান করবেন। উজির মনে মনে চিন্তা করলেন ,

১  সম্পদ না হলে তার শেষ জীবন দুখে যাবে

২. নিশ্চিত তার শিরচ্ছেদ হবে

৩. শিরচ্ছেদ থেকে বাঁচার জন্য তাকে পালাতে হবে।

উজির নিরুপায় হয়ে কুকুরের পাশে পড়ে থাকা দুধভর্তি ভাণ্ড থেকে দুধ পান করলেন। দু:খ নিবেন না, উজির সাহেব। আমি নিজেও  এক রাজার উজির ছিলাম। আপনার থলে দেখে  বুঝেছিলাম যে আপনি উজিড় মানুষ, কারন এই থলে শুধু উজিরই ব্যবহার করে থাকেন। আমিও আপনার মত  কোন এক পরিস্থিতে  বাঁচার তাগিদে নিরুপায় হয়ে এই বনে আশ্রয় নিয়েছিলাম। উজির সাহেব, জীবনের তৃতীয় সত্য হলো ‘নিরুপায় হওয়া’। নিরুপায় হয়ে সকল মানুষ অনেক অপ্রিয় কাজ করে থাকে। দেখুন, নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপনি শেষ অবধি কুকুরের ব্যবহৃত দুধ-ভাণ্ড থেকে  দুধ পান করতে বাধ্য হলেন।

  বিদায় উজির সাহেব

 ভাল থাকবেন অবিরাম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top