একটি বাড়ির ইনটেরিয়র-এক্সটেরিয়র ডিজাইন , রঙের ব্যবহার, আলোক সজ্জা, Entry-Exit ব্যবস্থাপনা, বাতাস গমনা-গমনের সিস্টেম, অভ্যন্তরীন বিন্যাস, গ্লাস ও মোজাইকের ব্যবহার ইত্যাদি দেখে আপনি খুবই মুগ্ধ। বাড়ির মালিক বা প্রকৌশলীর সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয়নি। বাড়িটির নান্দনিক দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রকৌশলী সম্পর্কে আপনি কল্পনাশ্রয়ী একটি ধারনা করতে পারেন। ঠিক তেমনি পৃথিবী, মানুষ, বিভিন্ন প্রজাতি, গ্রহ-নক্ষত্র, নীল আকাশ, ছায়াপথ, সমুদ্র, বায়ুপ্রবাহ, ধৃতুর পরিবর্তন, সৃষ্টির বৈচিত্রতা ও নৈপূণ্যতা দেখে আপনি হয়তো এই ইনটেলিজেন্ট ডিজাইনার সম্পর্কে বিস্ময়াভিভুত হতে পারবেন। অবাক হবেন, কোন সমআপ্তি টানতে পারবেন না।
————
এ প্রসঙ্গে আইনষ্টাইরে নাম স্মরণযোগ্য। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বক্তৃতা প্রদানের সময় শিক্ষার্থীরা আইনষ্টাইনকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করতেন তা হলো ‘হে মহামাতি আইনষ্টাইন’ ‘ Do you beleive in God ? তিনি উত্তরে সর্বদা বলতেন ‘I beleive in Spinojas’s God’ আমি স্পিনোজার ঈশ্বরে বিশ্বাস করি’।
————-
স্পিনোজার গড সম্পর্কিত ধারণা গতানুগতিক ধারণা থেকে একটু ভিন্ন ধরনের। তার মতে তিনি প্রয়োজনের উর্ধ্বে। তিনি মানুষের কাছে কিছুই প্রত্যাশা করেন না। তিনি চান মানুষ শান্তিতে বসবাস করোক। স্পিনোজার মতে তার ঈশ্বর বলেন ‘ আমার বন্দনা বন্ধ করো। আমি তোমাকে যা বলতে চাই তা হলো, তুমি পৃথিবীর পথে বেরিয়ে এসো এবং তোমার জীবন উপভোগ করো। Avwg †Zvgv‡K GK`g gy³ K‡i †i‡LwQ। আমাকে কী ধরনের অহংকারী ঈশ্বর বলে তোমার মনে হয় ? আমি প্রশংসিত হতে হতে বিরক্ত। আমি ধণ্যবাদ পেয়ে পেয়ে ক্লান্ত। কৃতজ্ঞতা বোধ করছো? আমার সম্পর্কে যত জটিল কল্পনাশ্রয়ী বিষয়গুলো তোমাদের শিখানো হয়েছে তার পূণরাবৃত্তি বন্ধ করো।’——- ইত্যাদি
———–
as per Quran মানুষের কাজ হলো এই প্লানেটে এমন একটি সিষ্টেম ডেভেলপ করা যাতে মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে। কুরআন সদাপ্রভু আল্লাহর উপর একটি হোলিষ্টিক ধারণা উপস্থাপন করেছেন। আপনি হয়তো এই পাঠের মাধ্যেমে তাঁর সম্পর্কে কিছুটা অনুভব করতে পারবেন। কুরআন এই বুদ্ধিমান সত্তাকে বুঝানোর জন্য কিছু গুণবাচক নামের ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ্ শব্দটি তাঁর ইসমে জাত, যার বচন ও লিঙ্গ হয়না। তিনি সকল পার্থিব গুনাবলীর উর্ধ্বে। কোন বস্তুই তাঁর মত নয়। তাঁর বস্তুতান্ত্রিক প্রকাশ হয় না। (কুরআন ৪২:২১) মানুষের সহজ উপলব্ধির জন্য কুরআন আল্লাহ্র ৯৯টি গুণবাচক নামের ব্যবহার করেছেন।
—–
তিনি আহাদ (এক), রহমান (দয়ালু), রহিম (চরম ক্ষমতাধারী) মালেকুল মুলুক (রাজার রাজা), আল-বারি (সৃজনশীল) জুল-জালাল (মহান), জুল-মাআরিজ, খালিক, মালিক, জাব্বার, মান্নান, ফাত্তআহ, কাহ্হার, বাসির, নাজির, হাকিম, সাত্তার, আওয়াল, আখির, জাহের, বাতেন——- ইত্যাদি। কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলো ‘Not in sense of material manefastation’। অনেক ইমামদের মতে আদেশ-নিষেধ ছাড়া কুরআনের অন্যান্য সকর কিছু আয়াত মেতাশাবিহাতের অর্নভুক্ত। মুতাশাবিহাত মানে অস্পষ্ট , বহু অর্থবহা। (not in sense of literal interpretation) কুরআন বলছে, ‘আল্লাহ আছমান ও জমিনের আলো। তাঁর আলোর দৃষ্টান্ত যেন একটি তাক, তাতে আছে একটি প্রদীপ, সে প্রদীপটি রয়েছে একটি কাঁচের ফানুসের মধ্যে। কাঁচের ফানুসটি যেন একটি উজ্জল নক্ষত্র। সেই প্রদীপ জ¦ালানো হয় পুত-পবিত্র জয়তুন বৃক্ষের তৈল দিয়ে, যা পূর্বমুখীও নয়, পশ্চিমমুখীও নয়। অগ্নি তা স্পর্শ না করলেও যেন তার তৈল নিজেই আলো দিচ্ছে। আলোর উপর আলো। (কুরআন, ২৪:৩৫) একটি রূপক প্রকাশ। অন্যত্র পবিত্র কুরআন তাঁকে অনন্ত গুণের আধার হিসাবে চিহ্নিত করে ঘোষণা করেন যে ‘আর সমগ্র পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে তা সবই যদি কলম হয় এবং যে সমুদ্র রয়েছে তার সাথে যদি আরও সাতটি সমুদ্র শামিল হয়ে কালি হয় তবু আল্লাহর গুণ বর্ণনা শেষ হবেনা। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (কুরআন ৩১;২৭) কুরআনের বাণি এই নির্দেশনা দেয় যে, তাঁকে নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা অবিজ্ঞের কাজ। তাঁর অসীমতা ও গুণবর্ণণ কল্পনার বাইরে। তিনি এক, স্বয়ম্ভু, অসীম, সময় ও স্থানের উর্ধ্বে। ‘হি ইজ হোলি ওয়ান, বিয়ন্ড দ্যা বিয়ন্ড, এ্যাগেইন বিয়ন্ড দ্যা বিয়ন্ড, এ্যাগেইন বিয়ন্ড দ্যা বিয়ন্ড’।
ড. বাসার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ
৬ জুলাই, ২০২৪ খ্রি.