abmshafiullah.com

সক্রেটিসের শেষ জবানবন্দি : এথেন্সের আদালত কক্ষ, ৩৯৯ খৃষ্টপূর্বাব্দ

হে এথেন্সবাসীগন!

আমি জানিনা, আমার অভিযোগকারীগণ কীভাবে আপনাদের প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে বন্ধু মেলিটাস, এ্যনিটাস ও তার মিত্রদের অভিযোগ ‘আমি অদ্ভুদ ধরনের দুষ্কর্মের জনক, যুবসমাজের বিভ্রান্তকারী, নাস্তিক, কোন দেবতায় বিশ্বাস করিনা, আকাশচারী, স্বর্গ-মর্ত্য নিয়ে কথা বলি, মন্দকে ভাল বলে প্রমান করি এবং সবাইকে আমার তত্বে বিশ্বাসী করে তুলি’। আরিষ্টোকিনাস তার নাটকে ‘সক্রেটিস’ নামক চরিত্রের সৃষ্টির মাধ্যমে এই সমস্ত গুজব রটিয়েছে। সে- এই- সকল গুজবের প্রণেতা। একেবারেই এ সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি আকাশচারী নই, নাস্তিকও নই, বিশেষত প্রাকৃতিক গবেষণার ক্ষেত্রে আমি একেবারেই অজ্ঞ। বিচরকক্ষের অনেকেই এই সত্যকে স্বীকার করবেন। আমি পেশাদার শিক্ষক নই, শিক্ষাদানের বিনিময়ে কারও কাছে আমি অর্থ গ্রহন করিনা এবং মানুষের কল্যানের নিমিত্ত আমি রাজণীতি থেকে সরে এসে ব্যক্তিগত জীবন বেচে নিয়েছি।

 

কিন্তু সক্রেটিস তোমার বিরুদ্ধে এত অভিযোগের কারন কি?

নিশ্চয় তুমি অদ্ভুদ কিছু করেছো। তুমি সাধারন মানুষ হলে তোমার নামে এত গুজব রটতো না।

 

সম্মানিত বিচারকবৃন্দ, আমার দূর্নামের মুল কারনটি আপনাদের কাছে ব্যাখা করছি। এথেন্সবাসিগন! আপানারা জানেন, লোকে আমাকে বিজ্ঞ বলে জানে যদিও কথাটি সত্য নয়। চারেফেন একদা ডেলফির দৈবজ্ঞের নিকট উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলো: বলুন ‘সক্রেটিসের চেয়ে অধিক জ্ঞানী কেউ আছে কি? দৈবজ্ঞ জবাব দিলেন, ‘না, অধিক জ্ঞানী কেউ নেই’ চারেফেন পরলোকে গমন করেছেন। কিন্তু বিচারকক্ষে উপস্থিত তার ভ্রাতা অবশ্যই এ কথার সত্যতা স্বীকার করবে। আমি অবাক হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করলাম। দৈবজ্ঞ তার জবাব দ্বারা কি বুঝাতে চাইছেন। আমিতো জানি ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ কোন জ্ঞানই আমার নেই। তিনি দেবতা, তিনি তো মিথ্যা বলতে পারেন না।

 

 দেবতার কথা পরীক্ষার জন্য আমি একজন রাজনীতিজ্ঞকে বেচে নিলাম। তার সাথে আলাপ করে এ সিদ্ধান্ত না নিয়ে পারলাম না যে, লোকে যদিও তাকে জ্ঞানী ভাবে এবং তিনি নিজেকে তার চেয়ে বেশি জ্ঞানী মনে করেন। আমি তাকে বুঝিয়ে দিলাম প্রাজ্ঞবর, যদিও আপনি নিজেকে জ্ঞানী মনে করেন কিন্তু আপনি সত্যিকার জ্ঞানী নন। তিনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গ আমার শত্রুতে পরিনত হলেন।

 

দৈববাণীর মর্মার্থ আমাকে বুঝতে হবে। তাই কবি ও শিল্পির সাথে কথোপকতনে বুঝতে পারলাম যে, তারাও জ্ঞানি নন। তারা শুধু জ্ঞানের ভান করছেন। কবি কি বলছেন, অনেক সময় তিনি নিজেও বুঝেন না। আমি সারমেয়র নামে শপথ করে বলছি, ‘আমি দেখলাম যারা জ্ঞানী বলে খ্যাত তারাই সবচে বেশি অজ্ঞানী। অপরদিকে যাদের জ্ঞানী বলে খ্যাতি কম, তারাই বরঞ্চ অনেক উত্তম ও সত্যিকারভাবে জ্ঞানী। ফলস্বরূপ আমার যাচাই বাচাই, দৈববাণীর মর্মাথের অনুসন্ধান আমার শত্রু বাড়িয়েছে এবং এভাবেই আমার বিরুদ্ধে অপবাদের সুত্রপাত হয়েছে।

 

এথেন্সবাসীগন! আমি জানিনা আমার অভিযোগকারীগণ কীভাবে আপনাদের প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে বন্ধু মেলিটাস, এ্যনিটাস ও তার মিত্রদের অভিযোগ ‘আমি অদ্ভুদ ধরনের দুষ্কর্মের জনক, যুবসমাজের বিভ্রান্তকারী, নাস্তিক, কোন দেবতায় বিশ্বাস করিনা, আকাশচারী, স্বর্গ-মর্ত্য নিয়ে কথা বলি, মন্দকে ভাল বলে প্রমান করি এবং সবাইকে আমার তত্বে বিশ্বাসী করে তুলি।’ আরিষ্টোকিনাস তার নাটকে ‘সক্রেটিস’ নামক চরিত্রের সৃষ্টির মাধ্যমে এই সমস্ত গুজব রটিয়েছে। সে- এই- সকল গুজবের প্রণেতা। একেবারেই এ সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি আকাশচারী নই, নাস্তিকও নই, বিশেষত প্রাকৃতিক গবেষণার ক্ষেত্রে আমি একেবারেই অজ্ঞ। বিচরকক্ষের অনেকেই এই সত্যকে স্বীকার করবেন। আমি পেশাদার শিক্ষক নই, শিক্ষাদানের বিনিময়ে কারও কাছে আমি অর্থ গ্রহন করিনা এবং মানুষের কল্যানের নিমিত্ত আমি রাজণীতি থেকে সরে এসে ব্যক্তিগত জীবন বেচে নিয়েছি।

 

কিন্তু সক্রেটিস তোমার বিরুদ্ধে এত অভিযোগের কারন কি? নিশ্চয় তুমি অদ্ভুদ কিছু করেছো। তুমি সাধারন মানুষ হলে তোমার নামে এত গুজব রটতো না। সম্মানিত বিচারকবৃন্দ, আমার দূর্নামের মুল কারনটি আপনাদের কাছে ব্যাখা করছি। এথেন্সবাসিগন! আপানারা জানেন, লোকে আমাকে বিজ্ঞ বলে জানে যদিও কথাটি সত্য নয়। চারেফেন একদা ডেলফির দৈবজ্ঞের নিকট উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলো: বলুন ‘সক্রেটিসের চেয়ে অধিক জ্ঞানী কেউ আছে কি? দৈবজ্ঞ জবাব দিলেন, ‘না, অধিক জ্ঞানী কেউ নেই’ চারেফেন পরলোকে গমন করেছেন। কিন্তু বিচারকক্ষে উপস্থিত তার ভ্রাতা অবশ্যই এ কথার সত্যতা স্বীকার করবে। আমি অবাক হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করলাম। দৈবজ্ঞ তার জবাব দ্বারা কি বুঝাতে চাইছেন। আমিতো জানি ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ কোন জ্ঞানই আমার নেই। তিনি দেবতা, তিনি তো মিথ্যা বলতে পারেন না।

 

 দেবতার কথা পরীক্ষার জন্য আমি একজন রাজনীতিজ্ঞকে বেচে নিলাম। তার সাথে আলাপ করে এ সিদ্ধান্ত না নিয়ে পারলাম না যে, লোকে যদিও তাকে জ্ঞানী ভাবে এবং তিনি নিজেকে তার চেয়ে বেশি জ্ঞানী মনে করেন। আমি তাকে বুঝিয়ে দিলাম প্রাজ্ঞবর, যদিও আপনি নিজেকে জ্ঞানী মনে করেন কিন্তু আপনি সত্যিকার জ্ঞানী নন। তিনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গ আমার শত্রুতে পরিনত হলেন। দৈববাণীর মর্মার্থ আমাকে বুঝতে হবে। তাই কবি ও শিল্পির সাথে কথোপকতনে বুঝতে পারলাম যে, তারাও জ্ঞানি নন। তারা শুধু জ্ঞানের ভান করছেন। কবি কি বলছেন, অনেক সময় তিনি নিজেও বুঝেন না। আমি সারমেয়র নামে শপথ করে বলছি, ‘আমি দেখলাম যারা জ্ঞানী বলে খ্যাত তারাই সবচে বেশি অজ্ঞানী। অপরদিকে যাদের জ্ঞানী বলে খ্যাতি কম, তারাই বরঞ্চ অনেক উত্তম ও সত্যিকারভাবে জ্ঞানী। ফলস্বরূপ আমার যাচাই বাচাই, দৈববাণীর মর্মাথের অনুসন্ধান আমার শত্রু বাড়িয়েছে এবং এভাবেই আমার বিরুদ্ধে অপবাদের সুত্রপাত হয়েছে।

 

হে এথেন্সবাসী, সংক্ষুব্ধগন ব্যতীত অপর সবাই আমাকে জ্ঞানী খেতাবে আখ্যায়িত করে। যারা আমার কথা শুনে তারা ভাবে অপর সকলের মধ্যে যে জ্ঞান নেই, আমার মধ্যে সেই জ্ঞান আছে। কিন্তু এথেন্সবাসি, সত্য কথা হচ্ছে যে, শুধু বিধাতাই জ্ঞানি। অপর কেউ নয়। দৈবজ্ঞ আমাকে জ্ঞানী বলে অবশ্যই এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের জ্ঞানের মুল্য সামান্যই। দৈবজ্ঞ আমার নামটি শুধু একটি দৃষ্টান্ত হিসাবে ব্যবহার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি তা সক্রেটিস সম্পর্কে বলতে চাননি। এ নামের উল্লেখ করে তিনি যেন বলতে চেয়েছেন: হে মনুষ্যবৃন্দ, তোমরা স্মরণ রেখো, শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী একমাত্র সেই ব্যক্তি যে সক্রেটিসের ন্যায় জানে যে, তার জ্ঞানের মুল্য প্রকৃতপক্ষে কিছুই নয়’। ফলস্বরূপ দৈবজ্ঞের বাণীর প্রতি আমার নিষ্ঠা আমাকে চরম দারিদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে।

 

কিন্তু যুবসমাজ কেন তোমার পাশে এতো জড়ো হয়? সম্পদশালি শ্রেণীর যুবকগনের তেমন কিছু করার না থাকায় তারা স্বেচ্ছায় আমার কাছে আসতো। ভণ্ড জ্ঞানীদের নির্জ্ঞানতা তাদের কাছে প্রকাশিত হতে থাকে। যুবকরা নের্তৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অবাধ্য হওয়ায়, তারা আমার উপর ক্ষেপে যায়। তারা অভিযোগ করেন ‘ আমি যুবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী, বুদ্ধিভ্রষ্ট, আমি পাপি’। যদি পশ্ন করা হয় সক্রেটিস মন্দ কি শিক্ষা দিচ্ছেন। তারা এর কোন জবাব দিতে পারেনা। অন্যান্য দার্শনিকদের বিরুদ্ধে বলার ন্যায় তারা আমার বিরুদ্ধেও বদনাম বলে বেড়ায়।

 

এ্যনিটাস ও লাইকন উচ্চ শ্রেনীর উচ্চাকাঙ্খী ও উদ্যোগী, তারা আমার বিরুদ্ধে শ্রেনীবদ্ধ হয়েছেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর অভিযোগকারীদের পুরোধা হলেন মেলিটাস, দেশপ্রেমিক মেলিটাস। তাদের অভিযোগ ‘সক্রেটিস দুষ্কর্মের নায়ক, তরুনদের বিভ্রান্তকারী, নাস্তিক, নতুন দেবতা সৃষ্টিকারী। দেখুন, মেলিটাস হলফনামায় বলেছেন ‘আমি ঐশ্বরিক শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমার বিশ্বস্থ স্বর্গীয় প্রতিভুগণ আধুনিক কিংবা প্রাচীন- সে কথা ভিন্ন। বড় কথা হলো আমি ঐশ্বরিক শক্তিতে বিশ্বাস করি। তাহলে ঐশ্বরিক শক্তিসমুহে বিশ্বাস করেও আমি কিরূপে অবিশ্বাসি বা নাস্তিক হতে পারি। উপ-দেবতাগন তো অবশ্যই দেবতা, কারণ তারা দেবতার সন্তান।

 

আমি নিশ্চিতভাবে জানি আমার অনুসন্ধান দ্বারা আমি অনেক শত্রু সৃষ্টি করেছি। আমার ধ্বংশ যদি ঘটে তাহলে এই শত্রুতা থেকেই আমার ধ্বংশ হবে। মানুষের কাজ হলো তার নির্দিষ্ট স্থানকেই রক্ষা করা, তাকে পরিত্যাগ করা নয়। হে এথেন্সের ভ্রাতৃবৃন্দ, যে-আমি আপনাদেরই অধিনায়কদের আদেশে পটিডিয়া, এমপিফলিস এবং ডেলিয়ামের যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর মুখে নির্দিষ্ট স্থান পরিত্যাগ করিনি, সে আমি দার্শনিক কর্তব্য পালনে পিছ পা হতে পারিনা। এনিটাসের যুক্তি গ্রহন না করে আমাকে যদি এই শর্তে মুক্তি দেন যে ‘আমি আর বিশ্বের সমস্ত বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করবো না- যদি দ্বিতীয়বার আমি এরূপ অনুসন্ধান কাজে লিপ্ত হই, তা হলে মুত্যু নিশ্চিত।’ আপনাদের এরূপ শর্তের জবাবে আমি বলবো— এথেন্সবাসীগন, আমি আপনাদের সম্মান করি ও ভালবাসি। কিন্তু আমার চরম আনুগত্য আপনাদের কাছে নয়। আমার আনুগত্য বিশ্ববিধাতার প্রতি। আমার জীবন থাকা পর্যন্ত কখনই আমি দর্শনের শিক্ষা ও তার প্রচার হতে বিরত হবো না। যার সাথে সাক্ষাৎ হবে তাকেই বলবো জ্ঞান ও আত্মার উন্নয়নের প্রতি নজর না দিয়ে কেবল অর্থ, সম্মান ও খ্যাতির সঞ্চয়ে তোমরা কি লজ্জা বোধ করনা ?

 

সুতারাং আমি বলছি: বিচারপতিগণ, এনিটাস আপনাদের যা করতে বলে আপনারা তাই করুন। আপনাদের যেমন অভিরুচি তেমন সিন্ধান্ত আপনারা গ্রহন করুন। আপনাদের ইচ্ছে হয় আমাকে মুক্তি দিতে পারেন বা দন্ডিত করতে পারেন। কিন্তু একথা নিশ্চিত জানবেন, আপনাদের কোন সিদ্ধান্তই আমাকে আমার গৃহীত পথ থেকে ভ্রষ্ট করতে সক্ষম হবেনা। শুধু একবার নয়, বার বারও যদি আমাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়, তাহলেও আমার জীবনের পথ অপরিবর্তিত থাকবে।

 

এথেন্সবাসীগন! আপনাদের মধ্যে যারা আমাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন, তারা আমার ভবিষ্যতবাণী শ্রবণ করুন। মৃত্যুর মুখোমুখি যে দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে ভবিষ্যতবাণী করার একটি ক্ষমতা জন্ম লাভ করে। সেই শক্তিতেই আমি বলছি, হে আমার হত্যাকারীগণ! একথা নিশ্চিত জেনো, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে আমাকে যে শাস্তি দিতে তোমরা সক্ষম হয়েছো, আমার তিরোধানের সঙ্গে সঙ্গে তার চেয়ে কঠিনতর শাস্তি তোমাদের উপর নিপতিত হবে। বয়সে তরুন যুব সম্প্রদায় তোমাদের উপর অধিকতর ক্ষুব্দ হবে। শেষ মুহর্তে আপনাদের নিকট আমার একটি যাঞ্চা রয়েছে। আমার প্রার্থনা, আমার পুত্রগণ যখন বয়োপ্রাপ্ত হবে তখন তাদেরও যেন আপনারা দণ্ডিত করেন। 

 

বিদায় মুহূর্ত সমাগত! আসুন আমরা আপন আপন পথে অগ্রসর হই। আমি অগ্রসর হই মৃত্যুর পথে। আপনারা অগ্রসর হউন জীবনের পথে। কোন পথ মহত্তর? জীবনের কিংবা মৃত্যুর? বিশ্ববিধাতাই তার জবাব দিবেন।

 

 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top