আত্ম-বিশ্লেষণ
সমাজ জীবনে ব্যক্তিত্ব খুবই গুরত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক অবস্থা, পারিবারিক আবহ, সামাজিক পরিবেশ এবং বংশগতি নির্ধারণ করে দেয় আপনি কোন ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন। কম বেশি সকল মানুষই জীবনে সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে চায়। এটি রাতারাতি গঠিত হয়না, যে কারণে আত্ম-বিশ্লেষণ খুবই গুরত্বপূর্ণ। আত্ম-বিশ্লেষণ একটি গুরত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের সবল ও দূর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারে।
ব্যক্তিত্বের শ্রেণীবিভাগ
সমাজে বিভিন্ন রকমের ব্যক্তিত্ব দেখা যায়। সমাজবিজ্ঞানীরা ব্যক্তিত্বকে সাধারণত অন্তর্:মুখি ও বহি:র্মুখি এই দুই ভাগে ভাগ করেন। নিম্নে সংক্ষেপে তাদের বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হলো।
অর্ন্তমুখি ব্যক্তিত্ব বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব
১. চুপচাপ থাকে বেশি বক বক করে
২. ভেবে কাজ করে কাজ করে ভাবে
৩. ভীতু ও খুঁতখুঁতে স্বভাবের অস্থির ও চঞ্চল স্বভাবের
৪. কিছুটা নির্বান্ধব বন্ধু বৎসল
৫. একা থাকতে চায় দলে থাকতে পছন্দ করে
৬. নিজেকে জাহির করে নিজেকে লুকিয়ে রাখে
সবল ও দূর্বল দিক চিহ্নিত করা
ব্যক্তিত্বের গঠন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং তা পুরো জীবনের সাথে জড়িত। ব্যক্তি ক্রমাগত পরিবর্তনের ভিতর দিয়েই সামনে এগুতে থাকে। সুন্দর ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য প্রথমত প্রয়োজন নিজের সবল ও দূর্বল দিকগুলোকে চিহ্নিত করা। একটু মনযোগী হলে আপনি সহজেই আপনার দুর্বল দিকসমূহ খুজে পাবেন। এক টুকরা কাগজ নিন এবং ব্যালেন্স শিটের মতো কাগজের বাম দিকে সবল দিক ও ডান দিকে দূর্বল দিকগুলো লিখুন।
সবল দিক – – দূর্বল দিক
স্বাস্থ্যবান রুগ্ন
সাহসী ভীতু
হাসি খুশি মন মরা
আধুনিক গতানুগতিক
নিরপেক্ষ পক্ষ-পাতিত্ব
বিজ্ঞান মনস্ক কুসংস্কারাচ্ছন্ন
স্থিরধীর বেশি চঞ্চল
নিজের সবল দিকের জন্য খুশি হোন এবং নিজেকে ধন্যবাদ দিন। আর দূর্বল দিকগুলোকে শ্রেণিবিন্যাস করে পর্যায়ক্রমে সংশোধনের চেষ্টা করুন। কখনো থামবেন না। পৃথিবীতে অনেক দূর্বল ব্যক্তি সবল ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। এক সময় দেখবেন যে, আপনি ত্রুটিমুক্ত আদর্শ মানুষ হয়ে উঠেছেন। নির্মল আনন্দে ভরে উঠবে আপনার জীবন।
আত্ম-বিশ্লেষণ পদ্ধতি
০১. সেলফ্ রিপোটিং: দিনের কোন এক সময়ে নিজের তৈরী ব্যালান্স শিটের সবল ও দূর্বল দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করুন। নিজের হিসাব নিজে নিন। দূর্বল দিকগুলোর কারন চিহ্নিত করে আস্তে আস্তে সংশোধনের চেষ্টা করুন। জোরে উচ্চারণ করে বার বার বলুন ” আমি আরও সুন্দর হবো।’
০২. অবজারবেশন বাই সিগনিফিকেন্ট আদারস: অন্যের চোখে নিজেকে দেখা। ক্ষমতা ও পদ আপনাকে যেমন বেপরোয়া করে তুলতে পারে ঠিক তেমনি অক্ষমতা ও পদহীনতা আপনাকে হীনমনা করতে পারে। তাই একটু সাবধান হোন। স্পীড লিমিট মেনে চলুন। স্ত্রী, ঘনিষ্ট বন্ধু, সহকর্মী, সুধিজন সহ অন্যান্য মানুষজন আপনাকে কিভাবে দেখেন, সে দিকে নজর দিন। বন্ধুদের সমালোচনাকে ভাল দৃষ্টিতে দেখুন এবং নিজের ভুলগুলো সংশোধন করুন।
০৩. প্রিপারেশন অব ক্রাইসিস জার্নাল: যে সমস্যাগুলো আপনাকে হতাশ করে ফেলে, সে গুলো চিহ্নিত করুন। খেয়াল করুন, আপনি কিভাবে সমস্যাটি মোকাবেলা করেন। সাহসের সাথে মোকাবেলা করেন না কি পলায়ন করেন। দ্বিতীয়টি হলে এর কারন খুজুন। যে সমস্যায় আপনি বেশি হতাশ হন, সে ধরনের সমস্যা আরো বেশি বেশি মোকাবিলা করুন। দেখবেন দূর্বলতার উৎসগুলো সবলতার উৎসে পরিণত হবে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যক্তিত্ব যত না জন্মগত, তার চেয়ে বেশি অর্জিত। ব্যক্তিত্ব উন্নয়নের কোন সহজ-সরল পথ নেই। এটি একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। অবিরাম সমস্যা মোকাবিলা ও আত্মবিশ্লেষণেরের মাধ্যমে একজন মানুষ সুন্দর ও কাঙ্খিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারেন।
সবার জন্য শুভকামনা
১২/০৮/২০২৪ খ্রি.