abmshafiullah.com

ইহুদীদের আদিম ইতিহাস

 এই সেমেটিক জাতি খৃষ্টপূর্ব ১০০০ সনের আগে থেকেই জুডিয়াতে বসবাস করতো এবং ঐ সময়ের পর থেকে তাদের রাজধানি ছিল জেরুজালেম। দক্ষিণে মিশর আর উত্তরে সিরিয়া, আসেরিয়া ও ব্যবিলনের পরিবর্তনশীল সাম্রাজ্য- দুপাশের এই সকল বৃহৎ সাম্রাজ্যের কাহিনীর সঙ্গে তাদের কাহিনী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পৃথিবীতে তাদের গুরত্ব এইজন্য যে তারা একটা লিপিবদ্ধ সাহিত্যের সৃস্টি করেছিল- পৃথিবীর একটা ইতিহাস, আইন, সাময়িক বার্তা, স্তোত্র , জ্ঞানের বই, কবিতা, গল্প আর রাজনৈতিক উক্তি সমুহের একটা সংগ্রহ- যাকে ওল্ড টেষ্টামেন্ট বলা হয়। খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ  কিংবা পঞ্চম শতাব্দীতে এই সাহিত্যের সৃষ্টি হয়।  বোধ হয় ব্যাবিলনেই এই সাহিত্য একত্র সংগৃহিত হয়। জুডার রাজা জসুয়া ফারাও দ্বিতীয় নেকোকে বাধা দিতে গিয়ে মেগিডোর যুদ্ধক্সেত্রে পরাজিত ও নিহত হন। জুডা মিশরের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ব্যাবিলনের নতুন রাজা নেবুকাডনেজার দ্যা গ্রেট নেকোকে পরাজিত করে মিশরে ফিরতে বাধ্য করলেন এবং জেরুজালেমে নামমাত্র রাজা বসিয়ে জুডার কাজ চালাবার চেষ্টা করলেন।  জুডার সাধরণ মানুষ ব্যাবিলণীয় কর্মচারীদের হত্যা করলে তিনি জেরুজালেমকে লুট করে পুড়িযে দেন এবং লোকজনদের বন্দি করে ব্যাবিলনে নিয়ে যান। ব্যবিলনের বন্দিদশাই ইহুদীদের সভ্য ও ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। (খ্রিষ্টপুর্ব ৫৩৮ সাইরাসের ব্যবিলন দখল না করা পর্যন্ত ইহুদিরা ব্যলিনেই ছিল। তিনি তাদের একত্রিত করে ফেরত পাঠালেন যাতে তারা জেরুজালেমে মন্দির ও প্রাচীরগুলো পূণনির্মান করতে পারে।

 আব্রাহাম অনেক কালের পুরানো লোক। হয়তো ব্যাবিলনের হামুরাবির আমলে জীবিত ছিলেন। তিনি ছিলেন যাযাবর সেমিটিক গোষ্ঠীর গোষ্ঠিপতি। কিভাবে তার বংশধর মিশরে বন্দী হলেন তা বুক অব জেনিসিস এ পাওয়া যায়। বাইবেলের কাহিনীতে আছে্ ইব্রাহিমের ঈশ্বর দেশটি তাদের বংশধরদের দিবেন বলে প্রতিশ্রুত হয়েছিলেন। আব্রাহামের সন্তানরা দীর্ঘসময়  মিশর প্রবাস শেষে এবং মোজেসের নেতৃত্বে (১৬০০-১৩০০ বিসি) অরণ্য প্রান্তরে চল্লিশ বছর ঘোরবার পর মরুভুমির দিক থেকে কনান দেশ আক্রমন করলো। ইতিমধ্যে সংখ্যা বৃদ্ধি হতে হতে তারা ১২টি উপজাতিতে ছড়িয়ে পড়ে। বহু বছর ধরে আব্রহামের বংশধরেরা এক অখ্যাত উপজাতিই হয়ে রইলো। ঐ সময়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরোহিতরাই শাসন কাজ চালাতেন। তাদের বাছাই করতেন বয়োজৈষ্ঠরা। ১০০০ বিসি নাগাদ তারা সল বলে একজনকে রাজা নির্বচিত করলেন। কিন্তু তিনি শাসন ও যুদ্ধ বিদ্যায় খুব একটা চৌকস ছিলেন না। মাউন্ট গিলবোয়ার যুদ্ধে  তীরের আঘাতে সল প্রাণ হারালেন তার দেহ বেথ-সান শহরের প্রাচীরে পেরেক দিয়ে গেথে রাখা হলো। তার উত্তরাধিকারী ডেভিট (দাউদ) তার চেয়ে বেশি সাবধান ছিলেন এবং অনেক সফল হয়েছিলেন।

 ডেভিটের পুত্র সলোমন আরও বেশি চেীকস ছিলেন, তিনি টায়ারের রাজা হিরামের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক স্থাপন করলেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে তিনি খুব উন্নতি করলেন স্বয়ং ফারাওয়ের এক মেয়ে তাঁকে সম্পদন করা হলো। তিনি ছিলেন ছোট এক শহরের সামন্ত রাজা। তার ক্ষমতা এতটা ক্ষনস্থায়ী ছিল যে তার মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই দ্বাবিংশ রাজবংশের প্রথম ফারাও শিশাক জেরুজালেম অধিকার করে তার বেশিরভাগ সম্পদ লুট করেন। অবশ্য বাইবেলের কিংস্ ও ক্রনিকলস নামক বইগুলোতে রাজা সলোমনের অনেক মহিমা কীর্তন দেখা যায়। সমালোচকরা তাতে সন্দেহ করেন। বাইবেলের বিবরণীতে দেখা যায়, সলোমন জাঁকজমকেই সব উড়িয়ে দিয়েছিলেন আর অতিরিক্ত কর আর কাজের চাপে প্রজাদের জর্জরিত করেছিলেন। তার মৃত্যুতে তাঁর রাজ্যের উত্তরাংশ জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে  স্বাধীন ইস্রায়েল রাজ্যে পরিণত হলো। জেরুজালেম জুডার রাজধানি হয়ে রইলো। ব্যবলিনেই হিব্রুজাতি তাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে। সেখানেই তাদের ঐতিহ্যের গোড়াপত্তন হয়। ব্যবিলনের বন্দি ইহুদি আর সাইরাসের আদেশে জেরুজারেমে পুর্নবাসিত ইহুদির পার্থক্য অনেক। সভ্যতা কাকে বলে তারা শিখেছিল , প্রফেটদের অনুপ্রেরণার ফলেই তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের বিকাশ ঘটেছিল। মানব সমাজের বিকাশে এই প্রফেটগন নতুন শক্তি হিসাবে আর্বিভুত হয়েছিলেন। ( পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত ইতহাস, ৭৯-৮৪ অবলম্বনে)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top